রাসূল সা: প্রেমিক সাহাবা - সৈয়দ রশিদ আলম

রাসূল সা: প্রেমিক সাহাবা :

সৈয়দ রশিদ আলম

প্রত্যেক নবী রাসূলগণ মহান আল্লাহর বাণী প্রচার করার সময় একাধিক সাথী পেয়ে গিয়েছিলেন। যাদেরকে পেয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন পরীক্ষিত ও উত্তীর্ণ। সর্বশেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মোহাম্মদ সা: তাঁর কাজের সময়, কর্মের সময়, দ্বীন প্রচারের সময় একাধিক সাথী পেয়েছিলেন, যাদেরকে সাহাবা বলা হয়। যাদের ওপর মহান রাব্বুল আলামিন সন্তুষ্ট ছিলেন। এ রকম কয়েকজন সাহাবা হচ্ছেন হজরত আবুবকর সিদ্দিক রা:, হজরত ওমর ফারুক রা:, হজরত ওসমান গনি রা:, হজরত আলী রা:, হজরত হামজা রা:, হজরত বেলাল রা:, হজরত সালমান ফারসি রা:, হজরত আবু হুরায়রা রা:, মা খাদিজা রা:, মা ফাতেমা রা:, হজরত খালিদ বিন অলিদ রা:, হজরত আবু যার গিফারি রা:সহ অগণিত সাহাবা যাদের সংখ্যা লাখের ওপর। এই সাহাবারা নবী করিম সা: প্রত্যেকটি আদেশ ও নির্দেশকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। কোনো কোনো সাহাবা ইসলাম গ্রহণ করার আগে কঠোর ছিলেন; কিন্তু নবীজি সা:-এর কাছে আসার পর কোমলতায় পরিপূর্ণতা লাভ করেছিলেন। অনেক দূরে থেকেও করন নগরীর বাসিন্দা হজরত ওয়ায়েছ করনি রা: নবী করিম সা:-এর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গিয়েছিলেন। মহান রাব্বুল আলামিন ওয়ায়েছ করনির রা:-এর অন্তরে মোহাম্মদ সা:-এর ছবি অঙ্কিত করে দিয়েছিলেন। করনে বসেও হজরত ওয়ায়েছ করনি রা: নবী করিম সা:-এর যে ঘামসমূহ জমিনে পড়ত, সেই ঘাম মেশকে আম্বরের মতো সুগন্ধিতে পরিণত হয়ে করনের শাহান শাহ হজরত ওয়ায়েছ করনি রা: কাছে পৌঁছে যেত। আর তখন তিনি দরূদে ইব্রাহিম পাঠ করে নবীজির প্রতি ও তাঁর পরিবারের প্রতি সালাম ও দরূদ পেশ করতে থাকতেন। মহানবী নিজেও বলেছেন, ওয়ায়েছ করনির রা: শরীরের সুগন্ধ আমি মোহাম্মদ সা: পেতে থাকি। এই মহান সাহাবারা নবী করিম সা:-এর সাথে বদরের যুদ্ধে, অহুদের যুদ্ধে ও খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। যারা শাহাদতবরণ করেছেন তাঁরা অমরত্ব লাভ করেছেন। আর যারা জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গিয়েছেন, তাঁরা চিরদিনের জন্য অভিশপ্তের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। এই সম্মানিত সাহাবারা রা: জেহাদের ময়দানে বুকের মধ্যে তীরবিদ্ধ হওয়ার পরও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন, আর পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তাদের তার পবিত্র দরবারের মেহমান বানিয়ে নিতেন। কারণ, এই সম্মানিত মহান সাহাবাদের অন্তরের অন্তরে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা:-এর ভালোবাসা চিরস্থায়ী রূপ লাভ করেছিল। স্ত্রী-সন্তান, বাবা, মা, ভাইবোন, ধন-সম্পদের চেয়ে তাদের কাছে প্রিয় ছিলেন মোহাম্মাদুর রাসূল সা:। কারণ, তিনি নিজেই প্রিয় সাহাবাদের গড়ে তুলেছেন। একেকজন সাহাবার অন্তরে তিনি ইশকে এলাহির প্রেমের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহর রাব্বুল আলামিনের দীদারপ্রাপ্তির পর এই অন্তরের প্রেমের আগুন শান্ত হয়ে যাবে। নবী করিম সা: যখন হেরা পর্বতে ধ্যান সাধনায় যেতেন, তখন মা খাদিজা রা: যিনি, জগতের মা হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন তিনি হেরা পর্বতে নবীজির জন্য খাবার ও পানি পৌঁছে দিতেন। তার এই কোরবানি মহান আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়েছে। মসজিদুন কুবা ও মসজিদুন নববী নির্মাণের সময় সাহাবাদের রা: অসামান্য সহযোগিতা বিশ্ববাসী সারা জীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন। এর মধ্যে আসহাবে সুফফার সাহাবারা রা:, যাদের না ছিল ঘরবাড়ি, না ছিল কোনো সম্পদ, তাদের সম্পদ ছিল মোহাম্মাদুর রাসূল সা:। নবী করিম সা:-কে দেখার পর আসহাবে সুফফার সাহাবারা নিজেদের ক্ষুধার যন্ত্রণা, তৃষ্ণার যন্ত্রণা চিরদিনের জন্য ভুলে যেতেন। যাদের অন্তরে ইশকে রাসূলের সা: প্রেমের অগ্নিশিখা জ্বলছে, দুনিয়ার খাবার, দুনিয়ার পানি, তাদের কিভাবে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটাবে? সারা পৃথিবীর সব জায়গায় এই মহান সাহাবারা কলেমার দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন। নির্যাতিত হয়েছেন, অপমানিত হয়েছেন; কিন্তু তারপরও কলেমার দাওয়াত দিতে ভয় পাননি। কারণ, তারা জানতেন তাদের সাথে রয়েছে মোহাম্মদ সা:-এর দোয়া ও মহান আল্লাহর সাহায্য।
আমরা মহানবী সা: ও তার পরিবারের ও সাহাবাদের কোরবানির যে ঘটনাগুলো জানছি সেটি সম্ভব হচ্ছে মহান সাহাবাদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। নবী করিম সা:-এর দুই কলিজার টুকরা ইমাম হাসান রা: ও ইমাম হোসাইন রা:-কেও নিজেদের জীবন কোরবানি দিতে হয়েছে ভোগবাদীদের কাছে। তা-না হলে কোনটা সত্য ইসলাম, আর কোনটা নকল ইসলাম আমরা কোনো দিনই জানতে পারতাম না। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের ফরিয়াদ, হে দয়াময় আল্লাহ, আমাদের অন্তরে রাসূল প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি করে দাও। যেভাবে তুমি মহান সাহাবাদের অন্তরে ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমিন।

Comments