বইয়ের বিকল্প শুধুই বই

সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য বইয়ের বিকল্প শুধুই বই

-কে জি মোস্তফা

বইমেলার প্রথম দশক পার হয়ে দ্বিতীয় দশক চলছে। এই বইমেলা নিয়ে কিছু বলুন। 
বইমেলা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলছে। এটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে চির জাগ্রত রাখছে। কিন্তু বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এখন ইন্টারনেট আমাদের শিশুদের ঘরে কম্পিউটারমুখী করে রেখেছে। সে জন্য বইমেলায় ওরা আর ছুটে আসছে না। আগের দিনে আমাদের বই ছিল একমাত্র বিনোদনের উপকরণ। আমরা বই পড়ে আনন্দ পেতাম। বই পড়ে বিশ্ব সম্পর্কে জানতাম। নিজেকে চিনতাম। মননের বিকাশ ঘটত। বই আমাদের মাঝে নেশা ধরিয়ে দিত। বই পড়ে রাত কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু এখনকার প্রজন্ম সেই অবস্থায় নেই। তারা ইন্টারনেটে গেমসহ নানা কিছু দেখে। তাই বইমেলা তাদের অতটা কাছে টানতে পারে না। তবু অনেকেই মেলায় আসে। আসছে। আসতে আসতে মেলা জমে উঠবে।
তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাহলে আপনার আহ্বান কী?
কে জি মোস্তফা

বিশ্ববিখ্যাত লেখক লিউ টলস্টয় বলেছেন, জীবনের জন্য তিনটি জিনিস প্রয়োজন। এক-বই, দুই-বই, তিন-বই। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য, সত্যিকার জ্ঞান অর্জনের জন্য, সত্যিকারের মানুষ হওয়ার জন্য বইয়ের বিকল্প শুধুই বই। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের প্রভাবে বইবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের প্রয়োজন আছে, তবে তা প্রয়োজন বেশি যেন না হয়। পাঠ্যবইয়ের পর তরুণদের ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। তরুণেরা ভালো বই পড়লে নানা রকমের অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়বে না। তাদের বলব ভালো বই পড়।
আপনি বলছেন বই মননের বিকাশ ঘটায়। যে বই মননের বিকাশ ঘটাত সেই বইয়ের কাজ কেমন হচ্ছে?
 কী বই পড়ব? শিশু কিশোরদের উপযোগী বই বাজারে কেমন আছে? সেটা নিশ্চয় ভাববার বিষয়। এখন তো অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের লেখায়ও বানান বিভ্রাট ও শব্দের যথাযথ প্রয়োগের অভাব দেখা যায়। আমাকে অনেকেই বই দেয়, এই সমস্যার কারণে আমার পড়তে ইচ্ছে করে না। শিশু-কিশোরেরা যেটা ছাপার অক্ষরে দেখে সেটাকে শুদ্ধ মনে করে। পাঠ্যবইয়ে এখন ভুল পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সবাইকে। আমি বলব, আমাদের যেই ভাষার জন্য মানুষ শহীদ হলো সেই ভাষার সঠিক চর্চা করুন। ভালো সাহিত্য পাঠকদের হাতে তুলে দিন। প্রকাশকেরাও আজকাল নিজের অর্থে খুব বেশি বই করছে না। লেখকদের নিজের অর্থ খরচ করে বই করতে হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের বিকাশে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
শিশুদের মনুষ্যত্ব বিকাশের কথা বলছি। কিন্তু বাজারে এখন দেখছি ভূতের বইয়ের ছড়াছড়ি। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
হ্যাঁ, এগুলো শিশুদের কল্পনাশক্তি সেভাবে বাড়াচ্ছে না। আর বেশি ক্ষতি করছে কম্পিউটার গেম। যেকোনো জাতির আসল জিনিস হলো তার শিকড়। শিকড় বাদ দিয়ে কোনোভাবে আকাশে ওঠা সম্ভব নয়। শিকড় মাটিতে প্রথিত থাকতে হবে। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মজার মজার গল্পে তুলে ধরতে হবে।
পাঠক-লেখক প্রকাশক ও আয়োজক সবার উদ্দেশ্য কি অল্প কথায় বলবেন?
সবার প্রতি বলব ভালো কিছু সৃষ্টি করুন। মা-মাটি-মাতৃভূমির পক্ষে লিখুন। দেখেশুনে যাচাই করে ভালো বই কিনুন। আপনার প্রিয়জনকে ভালো বই উপহার দিন।

Comments