ডোনাল্ড ট্রাম্পের বইমেলায় ঝটিকা সফর

ঝটিকা সফর


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প তার প্রথম কর্মদিবসেই ওবামাকেয়ার বাতিল করে সারা বিশ্বকে এই বার্তা দিলেন যে, ওবামা যে পথে হেঁটেছেন, আমি সেই পথে হাঁটতে রাজি নই। তিনি ওবামাকেয়ার বাতিলসংক্রান্ত ফাইলে সই করে যখন উঠে দাঁড়ান তখন তার লাল টকটকে টাইটাকে তিনি ডানে-বামে একবার টানলেন। পরনের ব্লেজারটা তিনবার ঝাঁকিয়ে নিলেন। মুরগি যেমন ডানা ঝাপ্টা মেরে ধুলা ঝাড়ে, ঠিক সেভাবে। তার পর নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের বললেন, চলেন 
মন্ত্রীরা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন, কোথায় যাবেন লিডার? 
বইমেলায় ঝটিকা সফর

তিনি বললেন, শুনেছি বাংলাদেশে বইমেলা শুরু হয়েছে। ওটা নাকি বাঙালিদের প্রাণের মেলা, আমি সেখানে একবার যেতে চাই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এলেন। ভোরে নামলেন তিনি বিমানবন্দরে। ঢাকার ঐতিহাসিক জ্যাম ঠেলে সেখান থেকে শাহবাগ আসতে দুটো বেজে গেল। শাহবাগে গাড়ি সব নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে। শাহবাগের জ্যামে তিনি তিন ঘণ্টা আটকা পড়ে বিড় বিড় করে বললেন, দিস ইজ কল বেসিক ডেমোক্র্যাসি। সবাই ইচ্ছামতো স্বাধীনতা ভোগ করছে।

নাহ্, গাড়ি কিছুতেই নড়ছে না। অবশেষে ট্রাম্প হেঁটে বইমেলায় পৌঁছলেন। 
ট্রাম্প যখন বইমেলায় ঢুকলেন। ঘটনাচক্রে তখন আমিও ঢুকছি। আমি পূর্ব দিকে গিয়ে একটি বাঁশের টুলে বসলাম। কথায় আছে নাÑ কপাল যদি না হয় ফাঁকা ঘুরতেও পারে ভাগ্যের চাকা। আমার ভাগ্যের চাকাও ঘুরেছিল কিন্তু উল্টো দিকে। হঠাৎ করে কী যেন ধপাস করে মাথায় পড়ল। মাথা থেকে ছিটকে কাঁধে। ভাবলাম, নতুন লেখক তো কেউ হয়তো অভ্যর্থনা জানাতে ফুল ছুড়েছে, হাত দিয়ে দেখি পাখির মল। 
ওপরের দিকে তাকালাম। কালো একটা কাক বসে আছে। বিরক্তি নিয়ে বললাম, ব্যাটা কাক, মলত্যাগের আর জায়গা পেলি না!

এ দিকে ট্রাম্প একটি বই নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে বললেন, এই লেখকের বয়স দেখি অনেক বেশি। নিশ্চয় অ্যানালগ যুগের লেখক। 

তিনি বইটি নিলেন না। হাঁটতে হাঁটতে আরেকটি স্টলে এসে আরেকটি বই হাতে নিলেন। বইটির নাম ফেঁসে গেলেন গেদু চাচা

ট্রাম্প বিক্রয়কর্মীর দিকে তাকালেন। বললেন, ফেঁসে গেলেন গেদু চাচা বইটির লেখকের নাম্বার দেন। 

ট্রাম্প নম্বর নিয়ে ফোন করলেন। তখন আমি পাখির মল পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। এমন সময় ফোনের ক্রিং ক্রিং রিং টুং-এ চমকে উঠলাম। ফোন কানে ধরে বললাম, কে বলছেন? 

ওপাশ থেকে ভেসে এলো আমি ট্রাম্প বলছি। আমার ডান হাত কেঁপে উঠল। কান গরম হয়ে গেল। আমি বললাম, স্যার আপনি আমাকে ফোন দিয়েছেন? কী সৌভাগ্য আমার! 

ট্রাম্প বললেন, আপনি অবশেষে গেদু চাচাকে ফাঁসালেন? 

আমি বললাম, আমি ফাঁসাইনি স্যার, উনি নিজেই ফেঁসেছেন।

হুঁ। আপনি এখন কোথায়?
স্যার আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার পূর্ব পাশে বাঁশের টুলে বসে আছি। 
ঠিক আছে, আসছি।
ট্রাম্প এলেন আমার কাছে। আমাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বললেন, আপনাকে একটা বই লিখতে হবে। 

আমি একটু দম নিয়ে বললাম, হিলারিকে নিয়ে স্যার? 

ট্রাম্প হেসে বললেন, আপনি আমার মনের কথা জানলেন কিভাবে? 

আমি হেসে বললাম, আন্দাজ করে বললাম স্যার। 

ট্রাম্প বললেন, বুঝতে পারছি, মানুষের মনের কথা বোঝার লৌকিক ক্ষমতা আছে আপনার। সেই যাই হোকÑ ফেঁসে গেলেন হিলারি কিনটন এই শিরোনামে একটি বই লিখবেন।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম।

Comments