অপূর্ণতা
তাসনিম মিসমা
রুহি আয়নার সামনে বসে নিজের বেণী গাঁথছে আর চিন্তা করছে,
আগে আম্মু রোজ স্কুলে যাওয়ার আগে সুন্দর করে বেণী গেঁথে দিতো।
কিন্তু এখন আর দেয় না কেন জানি। হয়তো সে চায় যেন রুহি নিজের কাজগুলো নিজেই করা
শিখুক। এসব চিন্তা করতে করতে সে খেয়াল করল স্কুলের বাস গেটে এসে পড়েছে। তাই আর
দেরি না করে রুহি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় মা তাকে টিফিন কিনতে
কিছু টাকা দিয়ে বললেন ‘কিছু কিনে খেয়ে নিস আর সাবধানে
যাস’। কথাটা শোনার পর কেনো জানি রুহি বিরক্ত হলো। খুব একটা ঝারি দেয়ার
ভাব করে বলল, ‘প্লিজ থামবে তুমি,
রোজ রোজ এক উপদেশ আর ভাল্লাগে না’। মা চুপ করে রইলেন। কিছুই বললেন না। কিন্তু রুহি বুঝতে পারছিল
যে, মা মনে আঘাত পেয়েছেন, কিন্তু কিছু বলছেন না। মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করে বললেন,
‘মন দিয়ে পড়ালেখা করিস আর তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসবি। অন্য
কোথাও যাসনে আবার। দিনকাল ভালো না আজকাল। ‘রুহি এবার প্রচণ্ড বিরক্ত হলো’। এই তো আবার শুরু করলে উপদেশ দেয়া। যাই বলে রুহি বাসার গেট পাড়ি
দিয়ে বাসে ওঠে বসল।রুহি বাসে বসে বসে চিন্তা করছে যে,
‘ক্লাস টেন-এর একটা মেয়েকেও আবার এসব বলা লাগে নাকি। যতসব
ব্যাকডেটেড কথাবার্তা। দুপুর ২টার দিকে স্কুল ছুটি হয়েছে। রুহি বাসায় এসে দেখে মা
তার জন্য ভাত নিয়ে বসে আছেন। রুহিকে তিনি নিজে খাইয়ে দিবেন বলে। রুহি মাকে বলল,
‘আচ্ছা মা, তোমার কি মনে হয়
না আমি বড় হয়েছি? নিজের খেয়াল রাখতে পারব। এসব কেন করো?’
রুহির ডান হাতটা ধরে তাকে কাছে টেনে মা বলল,‘মায়ের কাছে তার সন্তান সবসময় ছোটই থাকে। আমি না খাওয়ালে যে
তুই কত দেরি করে খেতে বসবি নাকি বসবিই না তা নিয়ে তো আমাকে চিন্তায় থাকতে হতো।’এই বলে মা তার মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলেন।
আজ অনেক দিন পর রুহি ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে। এখন সে
মেডিক্যালের স্টুডেন্ট। মা মারা গেছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেল। এখন আর কেউ খাবার
টেবিলে খাবার নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে না। না খেতে চাইলে জোর করে খেতেও বলে
না। সকালে বের হওয়ার সময় কেউ বলে না যে, ‘সাবধানে যাস। সময় মতো খেয়ে নিস...। ‘
রুহি এখন চায় যে কেউ তাকে এসব বলুক। সেও তাকে খুব
একটা জোর দেখিয়ে বলুক,
‘আমি নিজের যত্ন করতে পারি...। ‘ তারপর কেউ আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিক।
এখন সত্যিই রুহিকে বড় হতে হয়েছে। মাকে বলা নিজের
কথাটাও পালন করতে হয় রোজ।
কিন্তু কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে।
একটা অভ্যাস রয়ে গেছে। হ্যাঁ,
মায়ের এই ভালোবাসা (অভাবটুকু) অনুভব করতে থাকে রুহি...।
ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ,
ঢাকা
Comments
Post a Comment